পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

সোনার হরিণের খাঁচায় বন্দী জীবন

 আমাদের সোনার বাংলাদেশে চাকুরী হল একটা সোনার হরিণ, লেখাপড়া তাই চাকুরী কেন্দ্রিক- সার্টিফিকেট সর্বস্ব!

ছোটবেলা থেকে মাথার মধ্যেও চাকুরীর প্রতি অমোঘ নেশা ঢুকিয়ে দেয়া হয় পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে!
কোনরকমে একবার একটা যুঁতসই চাকুরী জোগাড় করতে পারলে হয় , সেটাকে টিকিয়ে রাখাই জীবনের পরম ব্রত- যে কারণে প্রি- চাকুরী কালে যে তরুন/তরুণীটি টপমোষ্ট অনেষ্ট ও বিপ্লবী ছিল সেও চাকুরীতে অমোঘ দূর্নীতির বেড়ায় একটা টোকাও দেয়ার সাহস পায়না অথবা উর্ধ্বতনের সকল অনিয়ম-অত্যাচারে-শোষনের বিপক্ষে কিছু বলতে পারে না - হয় সে সহ্য করে কুঁড়ে কুঁড়ে মরে কিংবা এক সময় চলমান সব স্রোতে নিজেও ভেসে থাকে - ডোবা যাবে না , চাকুরী ছাড়া যাবে না …!
একই অবস্থা বাংলাদেশের অধিকাংশ জাতীয় খেলোয়াড়দের - তাদের কাছেও খেলাটা মূলত একটা সোনার হরিণ - চাকুরীর মতই … প্যাশন নয় , ফলে খেলার সময় মাথায় সব সময় মনে হয় চাকুরীটা টিকিয়ে রাখার মানসিকতা অন্য সকল কিছুর উপর প্রভাব বিস্তার করে ॥
কিন্তু এখানে এই অষ্ট্রেলিয়ায় যেহেতু কেবল লনের ঘাস কেটেও জীবন চালানো যায় - শ্রমের মর্যাদা পাওয়া যায় - কেউ ছি ছি করবে সে সময়ই নাই কারও - এখানে খেলোয়াড় রাও খেলাটাকে প্যাশন আর হবি হিসাবেই প্রথমত খেলে- পরে ইনকাম, তাই হুটহাট খেলা ছেড়ে পারিবারিক ব্যবসা, কোন ট্রেড ওয়ার্ক বা কৃষিকাজে ফিরে যেতেও এদের বাঁধেনা - যে কারণে চাকুরী টিকিয়ে রাখার চেয়ে জয়ের জন্যে আনন্দ লাভের জন্যে এরা প্রাণপন খেলে …
আমাদের সাকিব আল হাসান বা তার সমসাময়িক আর কয়েকজন মাত্র এত বেশি ভালো খেলে আর অর্থ আয় করে খেলাটাকে চাকুরী পর্যায় থেকে প্যাশনে অনেকটা নিতে পেরেছিল হয়তো …
আসলে বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা, শ্রমের মর্যাদা না দেয়া, সার্টিফিকেট সর্বস্ব লেখাপড়া এবং অন্যের ফরমায়েস মেনে সকল অন্যায় সহ্য করে চাকুরীকে একমাত্র সোনার হরিণ মেনে নেয়া, বিপুল দূর্নীতি - এসব সব জাতীয় খেলায় প্রতিনিয়ত প্রভাব ফেলে …
তাই বারবার জেতার আশা জাগিয়ে হেরে আমাদের দর্শকদের যতই হতাশ করুক - খেলোয়াড় তার চাকুরী রক্ষা করতে পারলো কিনা সেটাও আমাদের ধর্তব্যের মধ্যে নিতে হবে — একজন খেলেয়াড়ের জন্যে তার খেলা নামক চাকুরীটা বাচানো যে কত কষ্টের তা আমরা আসলে কেবল দর্শক হয়ে বুঝবো না 🏏

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন