পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩

কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন


 কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন ১১ই জৈষ্ঠ্য/২৪ শে মে।

( নতুন বাংলা ক্যালেন্ডার নিয়মে ২৫শে মে হয় ১১ জৈষ্ঠ্য)
কাজী নজরুল ইসলাম অনেক আগে থেকেই এই উপমহাদেশের বাংলা ভাষাভাষি অঞ্চলে পলিটিক্যালী ব্যবহৃত হওয়া একজন কবি। কখনও তাঁকে ব্যবহার করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথকে রিপ্লেস করতে, কখনও দেশের সীমানায় ফেলে এপার বাংলা ওপার বাংলায় টানাটানিতে, কখনও মুসলীম সেরা কবি বানানোতে, কখনও ধর্মহীন কবি দেখাতে, কখনও সেক্যুলার হিসাবে মাথায় তুলতে, কখনও ধর্ম বিদ্বেষী বলে গালি দিতে আবার কখনও দীর্ঘ অসুস্থতা নিয়ে আফসোস বা কোন নরাধমকে খুশিও হতে …
আজব বাংগালি, হাজার মানুষের হাজার কান্ড!
অথচ কাজী নজরুল ইসলামকে আমার কাছে মনে হয় একজন কেবলই প্রচন্ড সাহসী কবি, মনের কথা কবিতায় বাক্য ও শব্দে ইচ্ছেমত ছড়িয়ে দিতে যাঁর একটুও কুন্ঠা হতো না এই অর্বাচীন আমাদের মত …
তেমনই একটা সাহসী উচ্চরণের কবিতা আজ পাঠ করি তার এই ১২৪ তম জন্মদিনে ( একবার অন্ততঃ পুরোটা আসুন পড়ি)

বিংশ শতাব্দী
▫️▫️▫️▫️
কাজী নজরুল ইসলাম
________________
হইল প্রভাত বিংশ শতাব্দীর,
নব-চেতনায় জাগো, জাগো, ওঠো বীর!
নব ধ্যান নব ধারণায় জাগো
নব প্রাণ নব প্রেরণায় জাগো,
সকল কালের উচ্চে তোলো গো শির,
সর্ব-বন্ধ-মুক্ত জাগো গে বীর!
নূতন কন্ঠে গাহো নূতনের জয়,
আমরা ছাড়ায়ে উঠেছি সর্বভয়!
সর্বকালের সব মোহ টুটি
বালারুণ-সম উঠিয়াছি ফুটি,
আজিকে সর্ব-পরাধীনতার লয়,
নতুন জগতে আমরা সর্বময়!
আমরা ভেঙেছি রাজার সিংহাসন,
করিয়াছি নরে আমরা গো নারায়ণ।
পায়ের তলার মানুষে টানিয়া
বসায়েছি দেব-বেদিতে আনিয়া,
টুটায়েছি সব দেশের সব বাঁধন
নিখিল মানব-জাতি এক-দেহ-মন।
পুবে, পশ্চিমে, উত্তরে, দক্ষিণে,
য়ুরোপ, রাশিয়া, আরব, মিশর, চীনে,
আমরা আজিকে এক-প্রাণ এক-দেহ,
এক বাণী – ‘কারো অধীন রবে না কেহ!’
চলি একে একে দৈত্য-প্রাসাদ জিনে।
পারি নাই যাহা, পারিব দু-এক দিনে।
কাটায়ে উঠেছি ধর্ম-আফিম-নেশা,
ধ্বংস করেছি ধর্মযাজকী পেশা!
ভাঙি মন্দির, ভাঙি মসজিদ,
ভাঙিয়া গির্জা গাহি সংগীত –
এক মানবের একই রক্ত মেশা।
কে শুনিবে আর ভজনালয়ের হ্রেষা!
আদিম সৃষ্টি-দিবস হইতে ক্রমে
প্রাচীরের পর প্রাচীর উঠেছে জমে।
সে প্রাচীর মোরা ভাঙিয়া চলেছি,
যতই চলেছি ততই দলেছি,
জ্বালায়ে চলেছি পুঞ্জিভূত সে ভ্রমে।
শ্রমণের চেয়ে পূজ্য ভেবেছি শ্রমে।
সংস্কারের জগদ্দল পাষাণ
তুলিয়া বিশ্বে আমরা করেচি ত্রাণ।
সর্ব আচার-বিচার-পঙ্ক হতে
তুলিয়া জগতে এনেছি মুক্ত স্রোতে।
অচলায়তনের বাতায়ন খুলি – প্রাণ
এনেছি, গেয়েছি নব-আলোকের গান।
নচিকেতা-সম আমরা মৃত্যুপুরী
বারে বারে যাই বারে বারে আসি ঘুরি।
মৃত্যুরে মোরে মুখোমুখি দেখিয়াছি,
মোদের জীবনে মরণ আছে গো বাঁচি।
স্বর্গ এনেছি মর্ত্যে করিয়া চুরি;
চাহিছে মর্ত্য দেবতা বাদলে ঝুরি।
সার্থক হল আজিকে ভৃগু-সাধন,
আমরা করেছি সৃজন নব-ভুবন।
এক আদমের মোরা সন্তান,
নাহি দেশ কাল ধর্মাভিমান,
নাহি ব্যবধান, উচ্চ, নীচ, সুজন;
নিখিলের মাঝে আমরা এক জীবন!
আমরা সহিয়া সকল অত্যাচার
অত্যাচারের করিতেছি সংহার।
ধ্বংসের আগে এই পৃথিবীরে
হাসাইতে মোরা আসিয়াছি ফিরে,
শেষের আশিস আমরা নিয়ন্তার;
খুলিতে এসেছি সকল বন্ধ দ্বার।
আমরা বাহিনী বিংশ শতাব্দীর
মন্থন-শেষ-অমৃত জলধির
কল্কি-দেবের আগে-চলা দূত,
কভু ঝড়, কভু মলয়-মারুত,
কভু ভয়, কভু ভরসা লক্ষ্মীশ্রীর।
জীবন-মরণ পায়ে বাজে মঞ্জীর!
আমরা বাহিনী বিংশ শতাব্দীর।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন