পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২০

সমাজ

 অষ্ট্রেলিয়ায় আসার পর খুব দ্রুত একটি কালচার শিখে নিয়েছিলাম যা বাংলাদেশী প্রবাসী পরিমন্ডলে সর্বাত্মকরণে প্রচলিত- কারও বাসায় দাওয়াত খেতে গেলে খাওয়ার পর নিজ প্লেটটি সযত্নে ধুয়ে রেখে আসা।

- খুবই চমকপ্রদ একটি কালচার ডেভেলপড করেছে বাংগালী প্রবাসীগণ। এটার সবচেয়ে বড় লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো - আমি তোমার বাসায় গিয়ে এই কাজটি করবো, তুমিও আমার বাসায় এসে একই কাজটি করবে - একটি মানসিক , অলিখিত নিয়ম একটি প্রচলন হিসাবে গড়ে উঠেছে।
এই বিষয়টির সাথে আমি অতি অতি প্রাচীনকালের একটি বিষয়ের মিলের মাধ্যমে মানব সমাজের একটি বিশেষত্ব খুঁজে পাই।

সময়কাল ধরেন গুহাবাসী মানবকাল। তখনও সমাজ, রাষ্ট্র কিছুই পরিপূর্ণ ডেভেলোপ করেনি । মানুষ মাত্র পরিবার নিয়ে কিংবা ছোট ছোট গোত্র গঠন করতে শুরু করেছিলো। রাষ্ট্র নেই, আইন নেই, নিয়ম কানুন নেই, ধর্মও ডেভেলোপ হয়নি। চাষবাসও শুরু হয়নি। বনে জঙ্গলে বন্য পশুর পাশাপাশি শিকার আর গাছের ফলমূলই খাদ্যের উৎস।
ধরি একটি গুহাবাসী গোত্র X একদিন একটি বড় বন্য হরিণ শিকার করে গুহায় ফিরছিলো, সেই সময় দূর থেকে আরেকটি গুহাহাসী দল Y তা দেখলো, কয়েকদিন ধরে Y গোত্রের কাছে খাদ্য তেমন নেই, শিকার করতে পরিশ্রম করতে হবে , তারচেয়ে তারা বুদ্ধি বের করলো রাতে X গোত্রের সবাই ঘুমালে মৃত হরিণটি তারা চুরি করে আনবে।
তারা সফলও হলো। X গোত্র প্রথমে অনেক ভয় টয় পেলেও তারা কোনভাবে জেনে গেলো তাদের হরিণ নিয়ে গেছে Y গোত্র।
তারাও বুদ্ধি করলো এবং Y গোত্র একদিন বড় মহিষ মেরে আনার পর তারাও চুরি করে নিয়ে আসতে সফল হলো।
এভাবে পাল্টাপাল্টি চলার পর একদিন তারা মারামারিও শুরু করলো। অনেকে মারা গেলো। তারপর টনক নড়তেই একদিন দুই গোত্রের বয়স্ক কয়েকজন নারী- পুরুষ মিলে ভাবলো আমরাও তোমাদের টা চুরি করবোনা, তোমরাও আমাদেরটা করবে না ... এভাবে হয়তো চুরি কেনো করা যাবে না তা তারা শিখেছিলো; তারপর হয়তো শিখেছিলো তোমার কাছে হরিনের মাংস বেশি আছে, আমার কাছে আছে মহিষ, তোমার কিছু আমাকে দাও, বিনিময়ে আমারটা কিছু নাও... শুরু হলো বিনিময় প্রথা।
এভাবেই অলিখিত চুক্তি বা কালচার বা প্রথা এবং ন্যায় অন্যায়ের ধারনা সমাজে দীর্ঘ পরিক্রমায় মানুষ শিখে, শিখে প্রাকটিস করতে করতে অভিজ্ঞতা থেকে একসময় বাধ্যতামূলক আইন তৈরী করেছে, আইন সমন্বয় করে সমাজ বা রাষ্ট্রের সংবিধান বানিয়েছে....
.... বাংলাদেশের সরকার কওমী মাদ্রাসাকে অনেক সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে, ডিগ্রিকে আধুনিক শিক্ষার সম মান করেছে, মাদ্রাসায় উপুর্যুপরী শিশুধর্ষণ( বলাৎকার ) বারবার বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসাবে কম আমল দিয়েছে, তাদের গুড বুকে থাকতে চেয়েছে এবং প্রধান মন্ত্রী কওমী মাতা খেতাব পেয়েছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা জাতির পিতার অবয়বে গড়া ভাস্কর্যে ঠিকই আঘাত করেছে...
কিন্তু এটাতো সভ্য সমাজের মতো নয়....
সভ্য সমাজে - আমি তোমারটা চুরি করবোনা কারণ তাতে আমারটাও আরেকজন চুরি করতে পারে, আমি তোমাকে মারবো না কারণ আমাকেও কেউ মারতে পারে... এভাবে নেগেটিভ জিনিসগুলো এক একজন থেকে কমতে কমতে টেনেডস টু শূন্যের দিকে যায়... ন্যায় অন্যায়ের ধারণা তৈরী হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন