পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২

কম পরাধীনতাকে অধীক পরাধীনতার সাপেক্ষে স্বাধীনতা মনে হয়

 মানুষ কখনও পূর্ণ স্বাধীন হতে পারে না,

কেবল পরাধীনতার ধরন, মাত্রা ও তীব্রতা কমাতে বা বাড়াতে পারে,

কমে গেলে আপাতভাবে মনে হয় স্বাধীন 

আর বেড়ে গেলেতো হয়েই গেলো পরাধীন ।

আসলে মানুষ এককভাবে কিংবা সামষ্ঠিক সব সময়ই পরাধীন …


বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা শশাঙ্ক থেকে শুরু করি-

তখন সেই সপ্তম শতকে একপাল জনগন গৌড় রাজার 

ক্ষমতা ও আইন কানুনের বেড়াজালে হলো আপাত পরাধীন…

শশাঙ্ক মারা গেলে শুরু হলো মাৎস্যন্যায় বা একপ্রকার অরাজকতা - সেই একপাল জনগন আরও পরাধীন -

‘অরাজকতায় পরাধীনতার মাত্রা সবসময় অধিক।’

তারপর পাল রাজারা আসল বাংলায় .. সেই একপাল জনগন তখন পাল রাজার ক্ষমতা এ আইন কানুনের সাপেক্ষে পরাধীন …

তারপর সেন রাজাদের আমল -

তারপর দিল্লীর সুলতানদের  অধীন বাংলার ছোট ছোট 

শাসকরাই যেখানে পরাধীন সেখানে সেই এক পাল জনতা আপেক্ষিকভাবে আরও পরাধীন..

সুলতানী আমলে প্রথমে দিল্লীতে মামলুক সম্রাজ্য, তারপর খিলজী সম্রাজ্য, তারপর তুঘলক সম্রাজ্য, সাইয়্যেদ সম্রাজ্য, তারপর লোদি সম্রাজ্য … তারপর সুলতানী আমল শেষ হয়ে মুঘল শুরু করলো বাদশাহী আমল … তখনও বাংলায় ছোট ছোট শাসক, নবাব , ভূঁইয়ারা আপেক্ষিকভাবে পরাধীন, আর জনগনতো পরাধীন আরও..

তারপর আসলো একদম নতুনধারা নিয়ে বৃটিশ রাজত্ব …

বৃটিশদের সাপেক্ষে আপাত বিশাল ক্ষমতাধর বাকী সব বাদশাহ, রাজা মহারাজ, নবাব, জমিদার সব একসাথে হলো দৃশ্যমান পরাধীন …নতুন নতুন আইন জারি হলো …

পরাধীনতার ধরন বদলাতে লাগলো … শোষনের পদ্ধতিতে গবেষনালব্ধ আধুনিকতা আসতে লাগলো …

তারপর শুরু হলো আপাত সেই বিশাল পরাধীনতা থেকে তথাকথিত স্বাধীনতা আনার মানসে দুইশত বছরের আন্দোলন … রক্তপাত …

বৃটিশও চলে গেলো দুই বিশ্বযুদ্ধে তাদেরও তখন হাল খারাপ… 

স্বাধীনতার সুষ্ঠু মাপকাঠি মেপে বড় বড় নেতারা ধর্মের ভিত্তিতে দুইটা দেশে বানায়ে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে মনে করলো আহা কত শত বছর পর হইলাম গো স্বাধীন…

আর সেই একপাল জনগন নতুন শাসনযন্ত্রে নতুন নিয়মে নতুন শাসনের সাপেক্ষে নতুন নতুন আইনের গ্যাড়াকলে হলো আরেক স্টাইলের পরাধীন …

ভারতের যাত্রা শুরু হলো নানা জাত পাতে ধর্মে ভারাক্রান্ত  হয়ে আর অন্যদিকে পাকিস্তান ব্রিটিশদের তৈরী ব্লাসফেমি আইনও আরও কঠোর করে বজায় রাখল…

সেই সাথে পূর্ব পাকিস্তানকে  পশ্চিম পাকিস্তান বানালো একরকেমর দাস .. পরাধীনের চেয়ে যেন পরাধীন। ‘দাসত্বের চেয়ে নিকৃষ্ট আর কোন সিস্টেম মানব জাতি তৈরী করেছিলো বলে মনে হয় না ।’

সেইরকম অলিখিত দাস হয়ে এক পাল জনগন সকলেই সবসময় পরাধীন।

আরও সময় গড়ালে ধর্মের ভিত্তিতে পূর্ব আর পশ্চিম পাকিস্তানের মিলনের ভ্রান্তি ও কুফল আরও স্পষ্টতঃ হলে প্রয়োজন  হলো আবার সংগ্রাম - যুদ্ধ … মুক্তির জন্য রক্ত বলিদান … জয় হলো … নতুন দেশ হলো - বাংলাদেশ … স্বাধীনতা এলো …

অথচ মানুষ  কখনই স্বাধীন নয় … মানে অধিক পরাধীনতা থেকে কম পরাধীনতায় যাওয়াটাই বাস্তবে স্বাধীনতা …

অথচ সেই স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতার বীজ যিনি বুনলেন সেই বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেললো এই দেশেরই মানুষ… স্বাধীন দেশে তাঁকে মরতে হলো ক্ষমতার বিষবাষ্পে অথচ পরাধীন নামের বৃটিশ ও পাকিস্তান দুই আমলেই তিনি বেচে ছিলেন !


… আপাত স্বাধীন মানুষ স্বাধীনতাকেও ভয় পেতে লাগলো … এ দেশেও সেই বৃটিশদের করা ব্লাশফেমী আইন ভিন্ন আদলে রয়েই গেলো ‘অনুভূতিতে আঘাত’ নামে… 

মত প্রকাশে নানান আকারে বাঁধ দিয়ে রাখা হয়েছে বারবার নানা ফর্দে, নানা আইন কানুনের সাপেক্ষে সকলেই পরাধীন…


তারমানে মানুষ কখনই পুরোপুরি স্বাধীন নয় , কম পরাধীনতাকে অধিক পরাধীনতার সাপেক্ষে স্বাধীন মনে হয় কেবল।


#স্বাধীনতা

#ইতিহাস

#সমাজ

#পরাধীনতা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন