পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

বই_আর_অতীত

মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে হেঁটে হেঁটে দিলকুশার দিকে যাওয়ার সময় হাতের বাম দিকে বিসিইআইসি ভবন আর পূবালী ব্যাংকের বড় দুটো বিল্ডিং এখন যেখানে, তার সামনে লোকটি বসত, ঘন বাদামী বর্ণের লোকটা, খুব হালকা হালকা মনে পড়ে - চারদিকে মোটা মোটা বইয়ের ঝাঁপ নিয়ে বসতেন , পুরাতন বই, কলকাতার নানা প্রকাশনী কিংবা বিলুপ্ত সোভিয়েতের সেই সব বাংলা অনুবাদ কিংবা বাংলাদেশের কালজয়ী অতীত উপন্যাস, গল্প ...ভরি ভরি বই থাকতো লোকটার কাছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় বিল্ডিংটি তখন গড়া হচ্ছিলো, পুরো মতিঝিল আর দিলকুশার নানা বিল্ডিংয়ে ছড়িয়ে ছড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা অফিস, তেমন একটি শাখা ছিলো ২৮ দিলকুশা বিল্ডিংয়ে ( বতমানে বিল্ডিংটির নাম মনে হয় দিলকুশা ভবন), আব্বা সেখানে বসতেন, সময়টা ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ হবে, মাঝে মাঝে আব্বার সাথে ষ্কুল ছুটি তাকলে যাওয়া হতো ওনার অফিসে।
সেই তখনই সেই লোকটর সাথে দেখা হতো। দেখতাম কার কাছ থেকে প্রতি মাসে এত এত বই কিনে নিয়ে আসেন আব্বা আমার আর আমার বোনের জন্য । মনে হতো ইস লোকটার কত বই...আমার যদি সবগুলো বই থাকতো....
লোকটাকে পরে মতিঝিলে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ( তখন বোধহয় গ্রীনলেডজ ব্যাংক) এর সামনেও দেখেছি বসতে মনে পরে।
আব্বার ধরিয়ে দেয়া সেই বই কিনে দেয়ার নেশা কখনও আর থামেনি, বাংলাবাজার পুরানো বইয়ের গলি আমাকে আর আমার আপাকে( Shahan Fer) খুব ভালো করে চিনে ফেলেছিলো , তারা জানতো আমরা গেলে চটের ব্যাগ বোঝাই করে করে সেবার সবরকম আর আর যত পাকিস্তান পিরিওডের দস্যু সিরিজ কিনবোই ...বিষয়টা বেশ মজার ছিলো...স্কুল শেষে বাংলাবাজার পর্ব শেষ হয়ে শুরু হয়েছিলো নীলক্ষেত পর্ব....
ততদিনে মতিঝিলের সেই বই বানিজ্য উঠৈ গেছে, নটরডেমে পরার সময়ও মনে পড়ে না কোনদিন মতিঝিলে একা একা হাঁটার মুহূর্তে সেই বইয়ের লোকটাকে দেখেছি কিনা?
চাকুরী পর্বকালে তো চোখে পড়া অসম্ভব...অবশ্য রমনা আর বঙ্গভবনে অফিস করা সময় মাঝে মাঝে হাউস বিল্ডিংয়ের সামনে বই নাড়াচাড়া করতে চলে যেতাম হেঁটে হেঁটে ....ততদিনে উপন্যাস আর গল্প পুস্তক ছেড়ে রেফারেন্স বই কেনার ঝোঁক এসে গিয়িছিলো....

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন