পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ১৭ মে, ২০১২

ল্যান্ডলাইন টেলিফোনের ভবিষ্যত


গুগলে ‘Will landline phone die soon?’  অথবা ‘Future of Landline Telephone’  লিখে সার্চ দিলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ প্রচুর তথ্যবহুল প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

বিষয়টি যে বর্তমান পুরো বিশ্বের আইসিটির একটি ক্ষুদ্র কিন্তু মুখ্য বিষয় তা ঐ সকল প্রতিবেদনের সুনির্দিষ্ট আলোচনা হতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয়। নির্ভরতা, নিরাপত্তা এবং পরিচিতির ক্ষেত্রে এখনও ল্যান্ডলাইন টেলিফোন কারও কারও ভাবনায় এগিয়ে থাকলেও ল্যান্ডলাইন সংক্রান্ত ব্যবসার প্রসার ঘটছেনা কারন ল্যান্ডলাইন সংযোগ পুরো বিশ্বেই ধারাবাহিকভাবে কমে যা”েছ। খুব সংগতভাবেই টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির চরম অগ্রগতি, ভোক্তা বা গ্রাহকের পছন্দের পরিবর্তন এবং বাজারের চাপ এর পেছনের কারন। এটাই বাস্তবতা।
http://ezinearticles.com/?Landline-Phones-and-the-Future&id=5941293 ওয়েবসাইটটিতে লেখা হয়েছে:
Everything is mobile, faster and cheaper now. Landline phones still remained to be the stationary communicating tool in households and offices. Perhaps there are still a few people who use landline phones. But if landline phone companies fail to adapt with the fast paced era that we are in now, landlines will indeed fall in the future.
সবকিছুই চলমান, গতিময় এবং সস্তা। ল্যান্ডলাইন ফোন এখনও স্থির যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে বাসাবাড়ি ও অফিসে ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্ভবত খুব কম মানুষই ল্যান্ডলাইন ফোন ব্যবহার করেন। কিন্তু যদি ল্যান্ডলাইন ফোন কোম্পানী চলমান যুগের গতির সাথে তাল না মেলাতে পারে, ল্যান্ডলাইন অবশ্যই ভবিষ্যতে বন্ধ হয়ে যাবে।
অন্য আরেকটি ওয়েবসাইটে (https://webspace.utexas.edu/cjc867/RHE330/FOTLintro.htm)  এই বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে লিখেছে-
Until the late 1990’s and early 2000’s, people used landlines as their primary means of contact (Fermoso). If you needed to get a hold of someone, you would call his or her seven-digit landline home phone number. However in recent years, the landline has become less popular and more and more people are using new, more advanced technology to communicate with people around the world. While many people still have a landline, some believe that the landline home phone is facing the crisis of possibly becoming extinct or obsolete. So, the questions are: What is the future of the landline phone? Should you kick yours to the curb, or keep it around a little while longer?
১৯৯০ এর শেষে এবং ২০০০ এর শুরুর দিকে মানুষ ল্যান্ড লাইনকেই যোগাযোগের মূল মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করত( ফরমোসো)। যদি কারও সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন হত তবে তুমি অবশ্যই তার সাত অংকের বাসাবাড়ির ল্যান্ড ফোনে কল করতে। সে যা হোক বিগত বছরগুলোতে ল্যান্ড লাইন এর জনপ্রিয়তা কমেছে এবং মানুষ বিশ্বের এ মাথা থেকে ও মাথা যোগযোগের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেছে নতুন, বেশি উন্নত প্রযুক্তি। এখনও অবশ্য অনেকেরই ল্যান্ডলাইন ফোন রয়েছে তথাপি অনেকে মনে করেন যে, ল্যান্ডলাইন হোম ফোন বাতিল বা ধ্বংস হয়ে যাবার সম্ভাবনার দুর্যোগময় সময় পার করছে। সে কারনেই প্রশ্ন হচ্ছে: ল্যান্ডলাইন ফোনের ভবিষ্যত কী? তোমার কি এটা ফেলে দেয়া উচিৎ নাকি আরও কিছূ দিন এটাকে ধরে রাখা উচিৎ?
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশণ ইউনিয়ন (আউটিইউ) এর একটি পরিসংখ্যানে  ২০০১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পুরো বিশ্বে প্রতি ১০০ জনে ফিক্সড লাইন টেলিফোনের সংখ্যার নিম্নধাবমান রূপের দিকে তাকালে আলোচিত বাস্তবতা কিছূটা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে:


চিত্র ১ এর গ্রাফ থেকে দেখা যাচ্ছে উন্নত বিশ্বে ল্যান্ডলাইন টেলিফোন সংযোগ বিগত বছরগুলোতে খুব দ্রুত কমে গেছে অন্যদিকে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এই সংযোগ কমেছে তবে কিছুটা কম হারে। তারমানে পুরো বিশ্বেই ল্যান্ডফোনের সংযোগ কমে যাওয়ার দিকেই নির্দেশ করছে।

ল্যান্ডফোন রাখার নানা সুবিধা থাকা সত্বেও যদি এই বর্তমান ধারা বজায় থাকে তবে এটা ভাবা সংগত হবে যে সংগত কারনেই মানুষ তার বিহীন যোগাযোগ মাধ্যমের দিকেই ঝূঁকছে বেশি। কপার ওয়ারের স্থাপন, নিয়মিত কর্তন, চুরি এবং প্রতিস্থাপন খরচ এর ঝামেলাতো মানুষ কম পোহায়নি। ল্যান্ডলাইনের সেই স্বর্ণযুগ আর নেই। যদিও একটি বড় সংখ্যার বয়স্ক মানুষ এখনও ল্যান্ডফোনেই অভ্যস্ত। কিন্তু তরুন প্রজন্ম খুব কমই ল্যান্ডলাইন ফোন ব্যবহার করে বরং তারা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটকেই বেছে নিয়েছে। সমস্যাটি এখানেই - পুরাতন প্রজন্ম  যতই পুরাতন হতে থাকবে এবং যতই নতুন প্রজন্ম সমাজে বেড়ে যাবে দেখা যাবে ক্রমাগত ল্যান্ডফোন ব্যবহার বা পছন্দ করার মত লোক কমতেই থাকবে।  ল্যান্ডলাইনের পক্ষেও লোক ক্রমেইকিন্তু কমে যাচ্ছে। এ চিত্র পুরো বিশ্বেই প্রায় একই রকম।

বিশ্বের প্রায় সকল ল্যান্ডলাইন ফোন কোম্পানী বা ওপারেটর এই বাস্তবতাকে বুঝতে পেরেছে এবং সে কারনেই তারা নতুন, গতিময় এবং জনপ্রিয় প্রযুক্তির ব্যবসাকেও পাশাপাশি গ্রহণ করেছে। ল্যান্ডলাইন পিএসটিএন প্রযুক্তির ব্যবসা যে আর লাভবান নেই সে বিষয় এখন মোটামুটি সবার ধারনার মধ্যে।

 যেখানে বিশ্বের প্রায় সকল ল্যান্ডলাইন/পিএসটিএন ওপারেটর বা কোম্পানী তারহীন (ওয়্যারলেস) প্রযুক্তি বা অন্য নতুন ব্যবসার  দিকে ঝুঁকছে সেখানে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানী লিমিটেড (বিটিসিএল) কে  ২০০৮ সালের জুলাই মাসে কোম্পানী হিসেবে বিটিটিবি থেকে নতুন নাম ধারন করার কালে তার মোবাইল টেলিফোন ব্যবসা(টেলিটক) এবং সাবমেরিন ক্যাবল ব্যবসা গেটওয়ে হতে আলাদা হয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। বিষয়টি খুবই প্রণিধানযোগ্য।

বিশ্বের কয়েকটি দেশের গুরত্বপূর্ন ওপারেটর বা কোম্পানী যাদের ল্যান্ডলাইন/পিএসটিএন ব্যবসা ছিল এবং রয়েছে তাদের বর্তমানে ল্যান্ডলাইনের পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসায়িক পন্যগুলোর একটি তুলনামূলক চিত্র নিচে তুলে ধরা হলোঃ

উপরের টেবিল ২ থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ল্যান্ডফোনের ব্যবসা আছে এমন প্রতিটি কোম্পানীরই মোবাইল কমিউনিকেশন ব্যবসা অবশ্যই রয়েছে , ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশের বিটিসিএল। এটা এই কোম্পানীকে সুনিশ্চিতভাবে আর্থিক দিক দিয়ে অন্য যেকোন ল্যান্ডফোন কোম্পানীর থেকে দূর্বল করে তোলার জন্য যথেষ্ট।

২০০৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উপরে যে সাতটি দেশের ল্যান্ডফোন কোম্পানীর তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হলো তাদের মোট ল্যান্ডফোন সংযোগের চিত্র তুলে ধরি তবে দেখব সাম্প্রতিক ধারা হচ্ছে ল্যান্ডফোন সংযোগ কমে যাচ্ছে।


২০০৮ এবং ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ল্যান্ডলাইন সংযোগ বেড়েছিল কার সেই সময়ে বাজারে আরও কিছু পিএসটিএন ওপারেটর (যেমন- র‌্যাংগস টেল, ঢাকা ফোন ইত্যাদি) ব্যবসা করছিল। পরবর্তীতে কোন বিশেষ কারনে সেইসকল ওপারেটরটের লাইসেন্স বাতিল করে দেয়া হয়।

নতুন, গতিময় এবং ভবিষ্যত যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে শক্ত প্রতিপক্ষ হিসেবে পাল্লা দিয়ে চলতে হলে কোম্পানীগুলে কে ল্যান্ডলাইন সার্ভিসের সাথে ইন্টারনেট বা আরও নানান সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে। বিটিসিএল অবশ্য এডিএসএল নামে একটি উচ্চগতির ইন্টারনেট প্রযুক্তি এনছে এবং ল্যান্ডফোন ব্যবহার করে কপার ওয়্যার দিয়েই ইন্টানেট সেবা দিতে সক্ষম হচ্ছে। ল্যান্ডফোনের কোয়ালিটি এখনও অতুলনীয় যা এখনও মানুষকে আকর্ষন করতে পারে। কিন্তু ওয়্যারলেস প্রযুক্তির ছোটখাট সমস্যাও তো প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় ক্রমাগত সমাধান হয়েও যাচ্ছে। যখন ভিওআইপি, মোবাইল এসকল প্রযুক্তির ছোটখাট বাগগুলো সম্পূর্ন দূর হয়ে যাবে, তখন ওয়্যারলেসের বিপক্ষে আর কেউ থাকবে বলে মনে হয়না।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টেলিকম ওপারেটর আমেরিকার এটিএন্ডটি ২০১০ সালে একটি প্রতিবেদনে লিখেছিল :
700,000 landlines of AT&T are being dropped every month. Eighteen million households (maybe more) now subscribe to Skype, Vonage, or some other flavor of VoIP. By the end of next year, cable companies will probably be serving up broadband phone service to over 24 million consumers. By 2011, the total VoIP subscriber count could go as high as 45 million. The revenue from PSTN/POTS is sinking fast. It dropped from $178.6 billion in 2000 to $130.8 billion in 2007—a trend that AT&T warns is "irreversible.
 প্রতি মাসে এটিএন্ডটির ৭,০০,০০০ ল্যান্ডলাইন ঝরে পড়ছে। আঠারো মিলিয়ন ( বা আরও বেশি) বাসাবাড়িতে স্কাইপি, ভোনেজ বা ভিওআইপির অনান্য  সংযোগ রয়েছে । আগামী বছরের শেষের মধ্যে , ক্যাবল কোম্পানীগুলোও সম্ভবত ২৪মিলিয়নের বেশি গ্রাহকের বাসায় ব্রডব্যান্ড ফোন সংযোগ দিতে পারবে। ২০১১ সালের মধ্যে, মোট ভিওআইপি ব্যবহার কারীর সংখ্যা৪৫ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। পিএসটিএন এর আয় দ্রুত পড়ে যাচেছ। ২০০০ সাল থেকে ২০০৭ সালে ১৭৮.৬ বিলিয়ন ডলার হতে পড়ে হয়েছে ১৩০ বিলিয়ন ডলার-এটি এমন ধারা দেখাচ্ছে  যা এটিএন্ডটিকে সতর্ক করে দিচ্ছে যে এটি ‘অপরিবর্তনীয়’।

এটিএন্ডটি সংগত কারনেই এই ল্যান্ডফোন সংযোগ কমে যাওয়া নিয়ে সতর্ক। তারা জোড়েসোড়ে নতুন প্রযুক্তি আনতে চাচ্ছে এবং ইতিমধ্যে ইউ-ভার্স নামে নতুন প্রযুক্তি চালুও করেছে। এই অফার টি ল্যান্ডফোন সংযোগ যাদের রয়েছে তারা ল্যান্ডফোন পরিবর্তন করে নিতে পারবে। এটিএন্ডটির ওয়েবসাইটে এই ওফারটি তুলে ধরা হয়েছে যেভাবে তা নিচের চিত্রে দেখানো হলোঃ


এটিএন্ডটির ইউ-ভার্স একটি অগ্রগামি নেটওয়ার্ক যা ফাইবার ওপটিক সংযোগ এবং এটির দ্বারা একসাথে পাওয়া যাবে-
-এডভান্সড ডিজিটাল টিভি
-হাই স্পিড ইন্টারনেট
-ডিজিটাল হোম ফোন সার্ভিস


টবিল ৪ এবং ৫ হতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিগত বছর গুলোতে ল্যান্ডলাইন ব্যতিত তথ্য প্রযুক্তির আর সকল মাধ্যমের বৃদ্ধি ঘটেছে খুব দ্রুত।


দশটি বাতিল হতে যাওয়া প্রযুক্তির একটি তালিকা ২০০৯ সালে www.computerworld.com ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছিল যার মধ্যে ল্যান্ডলাইন টেলিফোনও ছিল।


কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই ভবিষ্যতবাণী পুরোপুরি সত্য নয়। যদিও বাসাবাড়িতে দ্রুত ল্যান্ডফোনের চাহিদা কমছে তথাপি সরকারী অফিস , ব্যাংক, ব্যবসায়িক কেন্দ্র এবং বড় বড় দোকানে এখনও জনপ্রিয়, দরকারী এবং গ্রহণযোগ্য যোগাযোগ ব্যবস্থা হিসেবে ল্যান্ডফোনের চাহিদা প্রচুর। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে এ সত্য অনুধাবনযোগ্য।
তবুও মনে রাখতে হবে এই প্রযুক্তির প্রসার ঘটার সম্ভাবনা নেই যে কারনে এ ব্যবসারও প্রসার বা আয় বৃদ্ধির ভাবনাও যুক্তিসংগত নয়। সে কারনে ল্যান্ডলাইন ওপারেট/কোম্পানী কে অন্যভাবে ভাবতে হবে। প্রায় সকল দেশের ল্যান্ডলাইন কোম্পানী ইতিমধ্যে এইভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে এবং পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তির ব্যবসাও শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের একমাত্র ল্যান্ডফোন কোম্পানী এবং দেশের সবচেয়ে পুরাতন টেলিকম সেক্টর বিটিসিএল এর ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। কেনো? বিটিসিএল এখনও মোবাইল কমিউনিকেশন, আইপিটিভি, ওয়াইফাই, ওয়াইম্যাক্স বা আইপি টেলিফোনি এমন কোন নতুন প্রযুক্তির দিকে আগায়নি।  টিকে থাকতে হলে ভাবার এটাই সময়। মনে রাখতে হবে প্রযুক্তি সর্বদাই দ্রুত পরিবর্তনশীল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন